সাইকেলের দিনে। 🚲 (ছোটগল্প)
হারিয়ে যাওয়া একটি বিকেলের কথা ।
প্রতিদিনের মতই ঘীস্মের ঝকঝকে রোদ, ছড়িয়ে পড়েছে মাঠ ও ক্ষেত জুড়ে সবখানে।
সাদা মেঘেদের ভিড়ে আকাশটা পূর্ণ ছিল।
উত্তরের হাওয়ায় ঘীস্ম উজ্জীবিত, আধা শুকনো নদীর বুকে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল দুলছে, পাশ দিয়ে যাচ্ছে ছোট দুটো-একটা নৌকো, রোদ পরা রুপোলী ঢেউয়ে মাঝির বৈঠা ও পানি এক হয়েও আলাদা হয়ে যায় বার বার।
দূরের কিছু পানকৌড়ি, বক দলবদ্ধভাবে শাপলা, কচুরিপানার ফাঁকে মুখ ডুবিয়ে কি যেন খুঁজছে।পূব থেকে উড়ে আসা আরো কিছু মরাল-মরালী যোগ দিল তাদের সাথে ।
সব দৃশ্য নিতান্তই মূল্যহীন আমার কাছে। শুধু অপেক্ষা
কখন যে আসবে আমাদের.....!
গ্রামের ধুলোময় বাঁকা পথটা, নদী ঘেঁষে চলে গেছে বাড়ি থেকে সোজা হাটের দিকে, দু পাশ আবৃত খেজুর ও তুঁত গাছে । ঘাটের পাড়ে বড় শিমূল গাছটা দাড়িয়ে রয়েছে বহুকাল ধরে । প্রতিটা নৌকার দড়ি বাঁধা, তার শরীরে, আর সেও চুপ হয়ে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে অনেক দিন - নিস্তার নেই যেন । এই রাস্তার ধারেই প্রতীক্ষিয়মান আমি ও আমার দাঁড়িয়ে থাকা, সময় হয়েছে বাবা ও সাইকেল আসার ! কখন আসবে বাবা? কখন তুলবে সামনে ছোট করে পাতা সেই সীটে? সাইকেল এ চরবো বলে মন অস্থির। হটাৎ বাঁকা পথের লাইন ধরে ভেসে আসলো পরিচিতি সেই শব্দ "টিন টিন" !! যা স্নায়তে গেঁথে ছিল প্রতিটা সময়। কালের আবহে সেই শব্দটা ভুলে গেছি কখন, জানি না। আক্ষেপ ভরা দু চোখে চেয়ে দেখি বাবা আসছে সামনে ঝুলানো বাজারের ব্যাগ, কাছে এসে স্নেহশীল দৃষ্টিতে চেয়ে সাইকেলে তুলে নিলো আমায়। সাইকেল চলছে, আনন্দে পিছু ফিরে তাকাই, শিমূল গাছটা স্মিত, নির্বাক তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, বিদায় জানানোর ভাষা নেই তার!
আমরা চললাম, দুপা ফেলে হাওয়ায়, সাইকেলে। 🚲
বিকেলের শেষ, পশ্চিমের সূর্য গড়িয়ে পড়লো আর চলতে চলতে দিগন্ত ভেদ করে আবিরের মাঝে হটাৎ বিলীন হয়ে গেলাম । 🌅
রিজভী নাভিন
পোর্ট, পর্তুগাল
Comments
Post a Comment
thanks for your valuable comment.