প্রশাখার আখ্যান !! ( অণুগল্প)

বাড়িটা ফাঁকা অনেক দিন ধরে ।
ভোর থেকেই আজ প্রতিটা রুমে, বেলকনি, খাওয়ার ঘড়ে পায়চারি করছেন দাদু । আজ দাদুর ঘোরাঘুরির উদ্দেশ্য একটাই, আজ তার ও ছোট কাকুর জন্ম দিন !
ছোট কাকুর রুমে গিয়ে ক্ষান্ত চোখে, দেওয়ালে ঝুলানো কাজী নজরুলের ছবিটাতে এক পলক দৃষ্টি দিলেন তারপর পেছনে ফিরে মোটা চশমাটা খুলে বড় ফ্রেমে বাঁধাই করা ছবিটাতে ভালো করে হাত বুলিয়ে চশমাটা আবার চোখে নিলেন । ফ্যামিলির সবাই এক সাথে হাসি মুখে জরিয়ে ধরে ছবিটা তোলা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে ।
আবার হাত বুলালেন বড় ছেলে ও আমার বাবা আজাদের উপর আবার মেজো ছেলে আমার মেজো কাকু হেমনের উপর ও নাতি ঝুথি, বাঁকিদের মুখটিতে করুন দৃষ্টিতে অশ্রু সিক্ত চোখে হাত বুলালেন ।
যে বাড়িটা মেতে থাকতো নাতীদের দুস্তমিতে আজ ফাঁকা, শুন্য, নিস্তব্দ একেবারেই ফাঁকা । একজন বাবা হিসেবে ছেলেকে হারানোর যেমন অভিজ্ঞতা হয় দাদুর ও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

পাচক এসে খবর দিলো বাবু নাস্তা হয়ে গেছে খেতে আসুন । দাদু বললেন আলান উঠেছে । পাচক বললেন না এখনো উঠেনি । একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ওকে আর ডেকে কি হবে ।
সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় একবার তাকালো দাদির ছবিটাতে ।
নিচে এসে টেবিলের চেয়ারটা টেনে বসলো । আর পাচককে বললো বুজলি রতন যে বাড়িটা সব সময় মেতে থাকতো আজ কেমন শান্ত হয়ে আছে ।  সবাই থাকলে কতই না আনন্দ হতো । আজ আমার আর হেমনের  জন্মদিন । এই বাড়িটাতে মাত্র তিনজন মানুষ থাকি তুই,আমি আর আলান। রতন কোন কথা বলে না মাথা নিচু করে শুনে যাচ্ছে । ভোর থেকেই আমি এসব দৃশ্য আজ বিশেষ করে লক্ষ করছি । মাঝে মাঝে শরীর মন বেঙ্গে যাচ্ছে তবুও নিজেকে শক্ত করে দৃঢ়তার আশ্বাস দিচ্ছি ।

দাদু বললেন , আলান বড় হলেও আমার চোখে সে ছোটই রয়ে গেছে, কি আর অত খবর রাখবে আমাকে। বলে যেইনা হাত দুতে যাবে কলিং বেইলে টিং টিং বাজলো । রতন দা দরজা খুলে দিলেন, বাড়িটা মহা সমারোহে একেবারে ভরে গেলো । আমার সব ভার্সিটির বন্দুরা ফুলের তোরা ও কেক নিয়ে
এসেছে । আমিই সব পরিকল্পনা করেছি ।সবার সাথে যোগ দিয়ে দাদুকে বৃহৎতর ভাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করলাম । দাদুর চোখ মুখ বিস্মিত কান্নায় আমাদের সবাই কে জরিয়ে ধরলেন।

২।
৩ বছর আগে ফ্যামিলির সবাই একসাথে কক্সবাজার যাওয়ার সময় রোড এক্সিডেন্টে বাবা,মা, মেঝো কাকু, ছোট কাকু ও কাকিরা সবাই মারা যান আর আমি যেতে পারিনি, ঠিক ওইদিন আমার এইচ এস সি ফাইনাল পরিক্ষা ছিল !



--রিজভী নাভিন
শেরপুর,নালিতাবাড়ি 

Comments

Popular posts from this blog

আমার পড়া দশটি সেরা বাংলা ছোট গল্প ।

বেগুনী বৃষ্টি ! ☔ (অণু গল্প)

ধ্বনি ব্যবধান